
রাজাকারা- রাজাকার বলা বাংলাদেশের খেলায় পরিনত।
জামাতের নতুন প্রজন্মের নেতাকর্মীরা এটা হজম করছে
কারণ তারা ইতিহাস জানে না।
চলেন দেখি বিএনপির প্রথম প্রধান মন্ত্রী কে ছিল?
বিএনপির প্রথম প্রধান মন্ত্রী ছিল শাহ আজিজুর রহমান। তিনি ৫২ ভাষা আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিলেন। এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষে জাতি সংঘের অধিবেশনে যোগ দিয়ে, জোর গলায় বলেছিলেন,আমি একজন বাঙালী হয়ে বলছি ,২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান ঢাকায় কোন গনহত্যা চালায় নি।। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে শাহ আজিজুর রহমান রাজাকার আইনে গ্রেফতার হয়ে ২ বছর জেল খাটে । ১৯৭৩ সালে শর্ষিনার পীরের বিশেষ অনুরোধে শেখ মুজিব শাহ আজিজুর রহমানকে মুক্তি দেয় এবং ১৯৭৬ সালে মুসলিমলীগ ও প্রতিটি জেলার সকল রাজাকারদের নেতা কর্মী ও সমর্থক নিয়ে সে একটা দল গঠন করে যার নাম দেয় জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট। কয়েক মাসের মধ্যেই দলটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
অন্য দিকে বিএনপির প্রথম সরকারের প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদায় সিনিয়র মন্ত্রী ছিল মশিউর রহমান যাদু মিয়া নামে আরেক রাজাকারের বড়ো নেতা যিনি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাজাকার আইনে ৫ বছর জেল খাটে। শেখ মুজিবের মৃত্যু পরে ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসে সে মুক্তি পায়এবং মুক্তি পেয়ে মাওলানা ভাসানীর দলে যোগ দেয়।১৯৭৬ সালে মওলানা ভাসানীর মৃত্যু হলে মশিউর রহমান যাদু মিয়া ভাসানীর দল ন্যাপ এর প্রধান নির্বাচিত হয়।
এখন আসি মুল কাহিনীতে। ১৯৭৭ সালে ১৯ দফা ঘোষণা করে জিয়াউর রহমান ‘জাগদল” নামে একটা দল গঠন এবং বিভিন্ন জেলায় রাজনৈতিক সভা সমাবেশ শুরু করে। কিন্তু জিয়াউর রহমানের সভায় যদি ১০ হাজার মানুষ আসে তবে ঐ একই জায়গায় মশিউর রহমান যাদু মিয়া বা শাহ আজিজুর রহমান সভা সমাবেশ করে তবে মানুষ আসে ৪০ হাজার। বিষয়টি জিয়াউর রহমানকে ভাবিয়ে তোলে এবং সে বুঝতে পারে শোষণ মুক্তির নামে স্বাধীনতা আর স্বাধীনতার পরে মুজিবের শোষণ লুটপাট ও দুঃশাসনে লক্ষ লক্ষ মাুনষের অনাহারে মৃত্যু হয়, চাঁদাবাজি, শহর ও গ্রামে গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের ডাকাতি, চোখের সামনে চিকিৎসা বিহীন গরীব মানুষের মৃত্যু। এসব দেখতে দেখতে ঐ সময় সাধারণ মানুষ হয় ক্লান্ত। তারা বলতো আমরা তো পাকিস্তানি শাসন আমলেই অনেক ভালো ছিলাম। কই তোমাদের সস্তা চাল ,কোথায় তোমাদের কম দামের কাপড়? কোথায় তোমাদের ফ্রী চিকিৎসা, তোমারা আসলে ধোঁকাবাজ খুনি, লন্ঠনকারী, সাথে ভারতের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সম্পদ বাংলাদেশ থেকে লুটপাট করে নিয়ে যাওয়া , বাংলাদেশের মানুষ ভালো ভাবে নেয়নি । ফলে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানকে সাধারণ মানুষ ভালো ভাবে নেয়নি। জিয়াউর রহমানও এটি উপলব্ধি করে যে আগামীতে নির্বাচন হলে রাজাকার বাহিনীর কাছে সে নিশ্চিত পরাজিত হবেই হবে। ফলে রাজাকার বাহিনীর মশিউর রহমান যাদু মিয়া ও শাহ আজিজুর রহমানকে তার জাগদলে যোগদান করতে প্রস্তাব দেয়, তারা উল্টো জিয়াউর রহমানকে দলের নাম পরিবর্তন করার জন্য প্রস্তাব দেয়, জিয়াউর রহমান রাজি হলে জাগদল বিলুপ্ত করে এবং স্বাধীনতা পরবর্তী এই দুই রাজাকার প্রধানকে সাথে নিয়ে ১৯৭৮ সালে ১ সেপ্টেম্বর নতুন একটা দল গঠন করে যার নাম হয় “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ( বিএনপি)।” এতেই বিএনপির কপাল খুলে যায়। সারা বাংলাদেশের সকল মানুষ ও রাজাকাররা দলবেঁধে বিএনপিতে যোগদান করে এবং জিয়াউর রহমানের দল হয় এক বিশাল দল এবং বিএনপি হয় ব্যাপক জনপ্রিয় একটা দল।
ঐ একই সময় জিয়াউর রহমান আব্বাস আলী খান সাহেবকেও নবগঠিত বিএনপিতে যোগদানের প্রস্তাব করলে জামাতের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খান সাহেব রঃ পাল্টা প্রস্তাব দেয়, জিয়াউর রহমানকে। জিয়াউর রহমান ”আপনি যদি কোরআন দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন তবে জামাত বিএনপিতে যোগ দিতে রাজি আছে”। কিন্তু জিয়াউর রহমান ও রাজাকার বাহিনীর প্রধানরা এ প্রস্তাব সরাসরি না করে দেয়।
ফলে জামাত একা একটি দল হয়ে পড়ে।
জামাত স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তান হতে আলাদা হওয়ার ঘোর বিরোধী ছিল। তারা আল বদর বাহিনী নামে একটা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী বাহিনী তৈরি করেছিল। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর কিছু দিনের মধ্যে তা নিষ্ক্রিয় করা হয়। যদিও জামাত দল হিসেবে ঐ সময় সবচেয়ে ছোট একটা দল ছিল কিন্তু যুদ্ধ শুরু হলে সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতির কথা চিন্তা করে, জামাত নেতারা একবার পাকিস্তানকে আর একবার মুজিবকে যুদ্ধ না করে, ডিপ্লোমেটিক ভাবে সমস্যার সমাধান করার জন্য বার বার অনুরোধ করেছিল। কিন্তু জামাত সরাসরি কোন পক্ষের হয়ে যুদ্ধ করেনি। কাহার সম্পদ লুটপাট করেনি, বা খুন করেনি , ধর্ষণ করে নি। যার স্বাক্ষী কয় মাস আগে বীর বিক্রম উপাধি প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল অলি আহমদ,আ স ম আব্দুর রব,মেজর হাফিজ সহ অনেক মুক্তিযোদ্ধারাই দিয়েছে। অকপটে স্বীকার করেছেন জামাত কোন যুদ্ধ অপরাধ করেনি কিন্তু ভারতীয় মিডিয়া ও আওয়ামী লীগের দালাল মিডিয়া বার বার জামাত ও জামাত নেতাদের চরিত্র হনন করেছে এবং বিভিন্ন মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা চালিয়ে জামাতকে যুদ্ধ অপরাধী ট্যাগ দিয়েই চলছে গত ৫৫ বছর।
@@@ একজন সাংবাদিক এবং সম্পাদক হিসাবে অনুরুধ : আসুন একদল আরেক দলকে রাজাকার- রাজাকার বলে পরিপক্ব না ভেবে এবং হিংসার রাজনীতি পরিহার করে সুস্থ্য ধারার রাজনীতির চর্চা করি।
তথ্যসূত্র:
ভাসানী-মুজিব-জিয়া। বাংলাদেশ: শ্রীহট্ট প্রকাশ। পৃ. ৪৩৬। আইএসবিএন ৯৭৮৯৮৪৯৩০২৭২৮।
জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভা ১৯৭০-৯১
“রহমান, শাহ আজিজুর”। বাংলাপিডিয়া। ১৭ এপ্রিল ২০১৫। ৫ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০২৩।
“দৌলতপুর উপজেলার পটভূমি”। সংগ্রহের তারিখ ২৯ আগস্ট ২০২৪।
কুষ্টিয়া সংবাদদাতা (১২ অক্টোবর ২০২০)। “সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমানের স্ত্রী ও মেয়ের ইন্তেকাল, বিএনপির শোক”। দৈনিক নয়াদিগন্ত। ৫ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০২৩। {{সংবাদ উদ্ধৃতি}}: |শেষাংশ= প্যারামিটারে সাধারণ নাম রয়েছে (সাহায্য)
“নিউ এজ পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধ”। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০০৬।
“প্রথম আলো ২৬ শে মার্চ,২০০৮-সবুর-শাহ আজিজদের মুক্ত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু”। ২১ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।
###